বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:: ঢাকার কেরানীগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কথিত ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে এক প্রবাসীর বাড়ি দখল ও ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি রক্ষায় ওই প্রবাসী ইতালি থেকে দেশে ফিরে এসেছেন।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে এ ঘটনায় ওই প্রবাসী কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ইউনিয়নের স্কুল রোড এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর নাম লিটন হাওলাদার (৪৫)। তিনি কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের কূলচর গ্রামের ছলেমান হাওলাদারের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী লিটন হাওলাদার বলেন, আমি বিগত ১৭ বছর ধরে ইতালি রয়েছি। চার বছর আগে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন মধ্যেরচর মৌজায় ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি ক্রয় করি। আমার কাছে জমির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বিধায় সেখানে ছয় কক্ষ বিশিষ্ট একতলা সেমিপাকা বাড়ি নির্মাণ করি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভূমিদস্যু আলমগীর হোসেন (৩৬) ও তার সহযোগী শাহীন মিয়া (৩৮), এনামুল হক (৪০), শাহাদাত হোসেন (৩৪) সহ কয়েকজন ব্যক্তি তার জমির মালিকানা দাবি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমার বাড়ির মালিকানার সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করি। পরবর্তীতে আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা (পিটিশন নং-২১৯/২০২৫) দায়ের করি। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১ অক্টোবর।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আদালতে চলমান মামলার তোয়াক্কা না করে গত ৩১ আগস্ট সকালে আলমগীর, শাহাদাত ও শাহীনসহ ৩০/৩৫ জন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এসে জোরপূর্বক আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে তারা ভাড়াটিয়াদের উপর হামলা করেন। এরপর তাঁদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আমার ছোট ভাই রফিকুল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের বাঁধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর জীবন রক্ষায় সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর আলমগীর সন্ত্রাসীদের প্রহরা বসিয়ে আমার বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করেন।
লিটন হাওলাদার বলেন, এ ঘটনা শুনে বাড়ি রক্ষা করতে চারদিন আগে ইতালি থেকে কেরানীগঞ্জে ফিরে আসি। তাঁরা আমার দেশে ফেরার কথা জানতে পারে ওই বাড়ির আশপাশে না যাওয়ার হুমকি দেন। সেখানে গেলে আমাকে প্রাণে মেরা ফেলা হবে বলে হুমকি দুমকি দেন। সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর আমার ছোট ভাই ওই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান ১৪ থেকে ১৫ জন যুবক দেশীয় অস্ত্র হাতে গেটের সামনে বসে আছে। আর বাড়ি ভাঙার কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসে থেকে রক্ত পানি করে উপার্জিত টাকায় কেনা আমার এই বাড়ি দখল হয়ে যাবে, সেটা কখনো ভাবিনি। দেশে ফিরেও আমি আলমগীর ও তার সহযোগীদের হুমকিতে সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি মাননীয় ভূমি উপদেষ্টা ও প্রশাসনের কাছে হাত জোর করে আবেদন করছি আমার জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে কেনা এই বাড়িটি দখলমুক্ত করে আমাকে ফিরিয়ে দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক ভাড়াটিয়া বলেন, গত তিন বছর ধরে আমরা প্রবাসী লিটনের বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছিলাম। প্রতি মাসে তার ভাই এসে ভাড়ার টাকা নিয়ে যেতেন। সম্প্রতি আলমগীর নামের এক লোক এসে নিজেকে এই বাড়ির মালিক বলে আমাদের বাড়ি খালি করতে বলে। তবে বাড়ির মালিক লিটন আমাদের বাসায় অবস্থান করতে বললে আমরা সেখানেই থাকি। গত ৩১ আগস্ট আলমগীর পুনরায় দলবল নিয়ে এসে আমাদের হুমকি দুমকি দিয়ে মালপত্র বাসার বাইরে ফেলে দেয়। পরে আমরা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে যাই। এখন আমরা অন্যত্র বসবাস করছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, প্রবাসী লিটন যে দাগে জমি কিনেছেন আমিও সেই দাগে জমি কিনেছি। অথচ তিনি আমার মালিকানাধীন জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আমার কাছে জমির বৈধ কাগজপত্র আছে। তিনি আরও বলেন, প্রবাসীর বাড়ি দখল করার অভিযোগ ও তাকে প্রাণনাশের হুমকির দেওয়ার ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার বাড়ি আমি ভাংচুরও করিনি। তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ দিচ্ছে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু বলেন, ইতালি প্রবাসী ভাইয়ের জমির বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।